মাকরুহ
মাকরূহ (আরবি: مكروه) হলো এমন কাজ যা ইসলামিক শরিয়তে নিরুৎসাহিত বা পরিহারযোগ্য, তবে তা হারাম নয়। অর্থাৎ, মাকরূহ কাজগুলি এমন কাজ যা না করা উত্তম, কিন্তু তা করার জন্য শাস্তি বা গুনাহ হবে না। মাকরূহ কাজের মধ্যে কিছু কাজ ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে খুবই অবাঞ্ছনীয়, আবার কিছু কাজ কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।[১]
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]মাকরূহকে দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:
১. মাকরূহ তাহরিমি
[সম্পাদনা]মাকরূহ তাহরিমি (إلى الحرام أقرب) হল সেই ধরনের কাজ যা হারামের নিকটবর্তী। এই ধরনের কাজগুলি ইসলামিক শরিয়তে অত্যন্ত নিষিদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত এবং এগুলি পরিহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাকরূহ তাহরিমি কাজ করা গুনাহ হতে পারে এবং এগুলি বাদ দেওয়া জরুরি। এই প্রকারের মাকরূহ সাধারনত ওয়াজিবের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়।
- উদাহরণ: কিছু বিশেষ সময়ে নামায পড়া (যেমন, আসরের নামাযের পরে মাগরিব নামাযের আগ পর্যন্ত অন্য নামায পড়া)।[২]
২. মাকরূহ তানজিহি
[সম্পাদনা]মাকরূহ তানজিহি (إلى الحل أقرب) হল সেই ধরনের কাজ যা হালালের নিকটবর্তী। এই ধরনের কাজগুলি পরিহার করা উত্তম, তবে এগুলি করা গুনাহ নয়। মাকরূহ তানজিহি সাধারণত সুন্নত বা মুস্তাহাবের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, এগুলি করা সুন্নত নয়, তবে এগুলির মধ্যে কোন গুরুতর নিষেধাজ্ঞা নেই।
- উদাহরণ: অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু পরিহার করা উত্তম।[৩]
চিংড়ি মাছের বিধান
[সম্পাদনা]ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, চিংড়ি মাছ খাওয়া মাকরূহ। তবে অন্যান্য ইসলামিক স্কলাররা এটিকে হালাল বলে মনে করেন। ইসলামি শরিয়তের মধ্যে কিছু বিতর্ক রয়েছে চিংড়ি মাছের বিষয়ে, তবে কুরআন এবং হাদিসের ভিত্তিতে অনেক স্কলার এটি হালাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, চিংড়ি মাছ মাকরূহ হওয়া উচিত কারণ এটি স্রেফ মৎসজাতীয় প্রাণী নয়, বরং এটি বিশেষ ধরনের শূকরের মতো একটি প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
- অন্যদিকে, অনেক ইসলামিক স্কলার বলেন, চিংড়ি মাছ হালাল কারণ এটি সমুদ্রের প্রাণী এবং কুরআন ও হাদিসে সমুদ্রের প্রাণীকে হালাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।[৪] [৫]
মাকরূহের অন্যান্য উদাহরণ
[সম্পাদনা]- **বিশেষ সময়ে নামায পড়া:** যেমন, আসরের নামাযের পরে মাগরিব নামাযের আগে অন্য নামায পড়া।
- **অন্যান্য ইবাদত ছাড়া অতিরিক্ত খাবার খাওয়া:** যেখানে শরীরের ক্ষতি না হয়, কিন্তু পরিহার করা উত্তম।
- **অতিরিক্ত কথা বলা:** যা কোন উদ্দেশ্যহীন এবং সময় নষ্টকারী, যদিও এটি গুনাহ নয়।
- **অযথা তামাশা বা কৌতুক করা:** যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর বা অপ্রীতিকর হতে পারে।[৬] [৭]
শাস্তি বা গুনাহ
[সম্পাদনা]মাকরূহ কাজ করার জন্য গুনাহ বা শাস্তি নির্ধারিত নয়, তবে তা পরিহার করা উত্তম। তবে, মাকরূহ তাহরিমি কাজ করলে তা হারাম কাজের কাছাকাছি হওয়ায় গুনাহ হতে পারে। অন্যদিকে, মাকরূহ তানজিহি কাজ করলে সাওয়াব অর্জন সম্ভব, কিন্তু গুনাহ হয় না।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Campo, Juan Eduardo (২০০৯)। Encyclopedia of Islam। Infobase। পৃষ্ঠা 284। ISBN 9781438126968।
- হাদিস: "সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল" (মুসলিম)
- মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেছেন: "নদীর শিকার তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে" (মায়েদা ৯৬)।
- ইসলামিক শরিয়ত ও ফিকহ সম্পর্কিত গ্রন্থ: "আততাওযিহ ওয়াততালবিহ ২/১২৬"
এই নিবন্ধটিতে কোনও বিষয়শ্রেণী যোগ করা হয়নি। অনুগ্রহ করে একটি বিষয়শ্রেণী যোগ করুন, যেন এটি এই বিষয়ের অন্যান্য নিবন্ধের সাথে তালিকাভুক্ত করা যায়। (জানুয়ারি ২০২৫) |
- ↑ Diganta, Probashir (২০২২-১২-০৮)। "মাকরুহ কী? এর কারণে কী ধরনের গুনাহ হয়?"। প্রবাসীর দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ ডেস্ক, ধর্ম (২০২২-১২-০৮)। "মাকরুহ কাকে বলে, এর কারণে কী ধরনের গুনাহ হয়?"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ ডেস্ক, ধর্ম (২০২২-১২-০৮)। "মাকরুহ কাকে বলে, এর কারণে কী ধরনের গুনাহ হয়?"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ At-tahreek, Monthly। "প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : চিংড়ি মাছ খাওয়ার ব্যাপারে শরী'আতে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? দাঊদ (আঃ)-এর দেহে সৃষ্ট পোকাই চিংড়ি মাছ' বলে সমাজে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি আছে কি? -"। মাসিক আত-তাহরীক । ধর্ম, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ Digital Mimbar (২০১২-১২-০১)। "The Great Imam Abu Hanifah - Abu Imran Al-Sharkasi"।
- ↑ "হারাম, হালাল, মাকরুহ, মুবাহ ও মুস্তাহাব পরিচিতি"। প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ "হারাম, হালাল, মাকরুহ, মুবাহ ও মুস্তাহাব পরিচিতি"। প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-০৩।
- ↑ "Makruh"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-১০-২৭।