ভালোবাসা দিবস
ভালোবাসা দিবস | |
---|---|
আনুষ্ঠানিক নাম | ভালোবাসা দিবস |
অন্য নাম | ভ্যালেনটাইন |
পালনকারী | অনেক দেশের মানুষ; এংলিকান কমিউনীয়ন (পঞ্জিকা দেখুন) ইস্টার্ন অর্থডক্স গির্জা (পঞ্জিকা দেখুন) লুথেরান গির্জা (পঞ্জিকা দেখুন) |
ধরন | সাংস্কৃতিক, খ্রিস্টান, বাণিজ্যিক |
তাৎপর্য | সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের উৎসব পর্ব; ভালোবাসা এবং অনুরাগ উদ্যাপন |
পালন | অভিবাদন কার্ড এবং উপহার পাঠানো, ডেটিং, গির্জা পরিষেবা |
তারিখ |
|
সংঘটন | বার্ষিক |
সম্পর্কিত | সেন্ট জজ দিবস, সেন্ট মার্টিন দিবস, সেন্ট বার্থোলোমিজম দিবস, আল সেইন্টম দিবস, সেন্ট এন্ড্রু দিবস, সেন্ট প্যাট্রিক দিবস |
ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস যাকে অন্যভাবে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব[১] ও বলা হয়। একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি[২] ভালোবাসা এবং অনুরাগের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়। প্রথম দিকে এটি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন অথবা দুজন খ্রিষ্টান শহিদকে সম্মান জানাতে খ্রিষ্টধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল, পরবর্তীতে লোক ঐতিহ্যের ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে এটি বিভিন্ন দেশে আস্তে আস্তে প্রেম ও ভালোবাসার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক একটি আনুষ্ঠানিক দিবসে পরিণত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকলেও বাংলাদেশ সহ অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন
[সম্পাদনা]ইতিহাস
[সম্পাদনা]২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে নয়,বরং অনেকের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল,আর নৈতিকতার অবক্ষয়ও রোধ করা প্রয়োজন ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এর পেছনে কালো সত্যি আরো ভয়াবহ,সেই অন্ধ মেয়েকেও ইনি অবৈধ সম্পর্ক ছাড়া ছাড়েন না। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খ্রিস্টান জগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ দিবস, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন দিবস, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম দিবস, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম দিবস, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু দিবস, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক দিবস।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খ্রিস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদ্যাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত। [৩] বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদ্যাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।[৪]
বিভিন্ন দেশে
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" নামে এটি পালিত হয়। বাংলাদেশে সর্বশেষ সংস্কারকৃত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা পহেলা ফাল্গুন উদযাপিত হয়। একই দিন ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় বিধায় অনেকের কাছেই এই দিবসটি বেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এই দিনটি বাংলাদেশের অধুনা তরুণ সমাজ আরও ভিন্ন উপায়ে উদ্যাপন করতে উৎসাহিত হয়।[৫]
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শফিক রহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে ভালোবাসা দিবস পালন করেন। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর নিকট ভালোবাসা দিবসের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়। এই দিনে, বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, স্ত্রী এবং স্বামী, মা এবং সন্তান, ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড এবং অন্যান্য জিনিস আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রসমুহ কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। বাংলাদেশে এই দিনটিতে কোন সাধারণ ছুটি নেই।
এই "ভালোবাসা দিবস" পালন করার আয়োজন হিসেবে সামাজিক গণমাধ্যম খুব বড় একটা ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ফুলের দোকান, ফ্যাশন হাউজ, উপহারএর দোকান, বেকারি ও ফাস্ট ফুড দোকানগুলোতে বিশেষ কিছু অফার চালু রাখে। তাছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে "ভালোবাসা দিবসের গান", "ভালোবাসা দিবসের নাটক" ইত্যাদি প্রচারিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-"ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প"। যেখানে ক্লোজআপ টুথপেস্ট ব্র্যান্ড হতে স্পন্সরকৃত তিনটি রোমান্টিক নাটক প্রচারিত হয়। এই নাটকের মূলগল্পগুলো মূলত সাধারণ জনগণ বা দর্শকেরা নিজেরাই লেখেন, এর মধ্যে মনোনীত তিনটি গল্পের আলোকে এই নাটকগুলি নির্মিত হয়। এই আয়োজনটি দর্শকমহলের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে ভালোবাসা দিবস পালনের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র তরুণ সমাজের কাছেই সীমাবদ্ধ নয়, এই ভালোবাসার উৎসবে সব বয়সের শ্রেণী-পেশার মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে এবং সমলিঙ্গের বন্ধুদের সাথেও উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেন অনেকেই।
বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষ মনে করেন সাংস্কৃতিক এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা দিবস পালন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ শরীয়তে দিবসটির কোন ভিত্তি নেই।[৬]
পুরাতন এবং দূর্লভ ভালোবাসা দিবসের কার্ড, ১৮৫০–১৯৫১
[সম্পাদনা]- মধ্য-১৯শ এবং প্রাথমিক ২০শ শতাব্দীর ভালোবাসা দিবস
-
ইশার হাওল্যান্ড ভ্যালেন্টাইন, প্রায় ১৮৫০
-
হাতে লেখা কবিতা, "টু সুজানা" ভালোবাসা দিবস, তারিখ ১৮৫০ (কর্ক, আয়ারল্যান্ড)
-
কমিক ভ্যালেন্টাইন, মধ্য-১৯শ শতাব্দী
-
ভালোবাসা দিবস কার্ড, ১৮৬২
-
লোকশিল্প ভালোবাসা দিবস, ১৮৭৫ নিউ জার্সি
-
হুইটনি ভ্যালেন্টাইন, ১৮৮৭
-
সমুদ্রচিত্র ভ্যালেন্টাইন, তারিখ অজানা
-
ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন, প্রায় ১৯০০
- পোষ্টকার্ড, "পপ-আপ", এবং যান্ত্রিক ভ্যালেন্টাইন, প্রায় ১৯০০–১৯৩০
-
বাস্টার ব্রাউন ভ্যালেন্টাইন পোস্টকার্ড, রিচার্ড ফেলটন আউটকাল্ট, ২০< শতাব্দী
-
কৃতিত্ব এর অভিবাদন কার্ডের জন্য বিজ্ঞাপন, ১৮৮৩
-
Postcard by Nister, প্রায় ১৯০৬
-
ভ্যালেন্টাইন পোস্টকার্ড, প্রায় ১৯০০–১৯১০
-
একটি ক্ষুদ্র ২-ইঞ্চি পপ-আপ ভ্যালেন্টাইন, প্রায় ১৯২০
- শিশুদের ভ্যালেন্টাইন
-
Children's Valentine, ১৯৪০–১৯৫০
- অন্যান্য
-
তাইপেই ১০১, ভালোবাসা দিবস ২০০৬
-
ভালোবাসার চকলেট বক্স
-
ভালোবাসা দিবসের চকলেট
-
আত্মকৃত ভ্যালেন্টাইনের কেক
বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা
[সম্পাদনা]সর্বশেষ পাকিস্তান জনসম্মুখে ভালোবাসা দিবস পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইসলাম পরিপন্থী বিধায়, এর আগে সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়া ভালোবাসা দিবস পালন নিষিদ্ধ করে। ২০০৯ সাল হতে ইরানে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম (যেমন: ফুল এবং কার্ড দেওয়া ইত্যাদি) নিষিদ্ধ।[৭][৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Chambers 21st century dictionary। Mairi Robinson, George W. Davidson (Rev. ed সংস্করণ)। Edinburgh: Chambers। ১৯৯৯। আইএসবিএন 0-550-14210-X। ওসিএলসি 42215142।
- ↑ "Valentine's Day | Definition, History, & Traditions"। Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২১।
- ↑ "Pakistan bans Valentine's Day - EWN"। Eyewitness News।
- ↑ "Valentine's Day worth £1.3 Billion to UK Retailers"। British Retail Consortium। ১৮ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ভালোবাসার দিনে বসন্তবরণ, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
- ↑ নাঈম, মুহাম্মদ নাহিদ হোসেন। "ভালোবাসা দিবস : ইসলাম কী বলে"। দৈনিক ইনকিলাব অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৩।
- ↑ "যেসব দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ"। wwww.jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৩।
- ↑ Srivastava, Spriha (ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭)। "These countries have banned Valentine's Day"। CNBC। ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১।