বিষয়বস্তুতে চলুন

এসএমএস কমেট

এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নোঙ্গররত এসএমএস কমেট, তারিখ অজানা
ইতিহাস
জার্মান সাম্রাজ্য
নাম: এসএমএস কমেট
নির্মাতা: এজি ভালকান
নির্মাণের সময়: ১৮৯০
অভিষেক: ১৫ জানুয়ারি ১৮৯২
কমিশন লাভ: ২৯ এপ্রিল ১৮৯৩
নিয়তি: বাতিল, ১৯২১
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার ও শ্রেণী: মিটিওর-শ্রেণী অ্যাভিসো
ওজন: ১,১১৭ t (১,০৯৯ লং টন)
দৈর্ঘ্য: ৭৯.৮৬ মিটার (২৬২ ফুট ০ ইঞ্চি)
প্রস্থ: ৯.৫৬ মিটার (৩১ ফুট ৪ ইঞ্চি)
ড্রাফট: ৩.৬৮ মিটার (১২ ফুট ১ ইঞ্চি)
প্রচালনশক্তি: ২ × ৩-সিলিন্ডার দ্বিগুণ সম্প্রসারণ ইঞ্জিন, ২ শ্যাফট
গতিবেগ: ১৯.৫ নট (৩৬.১ কিমি/ঘ; ২২.৪ মা/ঘ)
সীমা: ৯৬০ নটিক্যাল মাইল (১,৭৮০ কিলোমিটার; ১,১০০ মাইল) at ৯ নট (১৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা; ১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা)
লোকবল:
  • ৭ জন অফিসার
  • ১০৮ জন নাবিক
রণসজ্জা:
  • 4 × ৮.৮ সেমি (৩.৫ ইঞ্চি) এসকে এল/৩০ কামান
  • 3 × ৩৫ সেমি (১৪ ইঞ্চি) টর্পেডো টিউব
অস্ত্র:
  • মূল পাটাতন ১৫ মিলিমিটার (০.৫৯ ইঞ্চি)
  • কনিং টাওয়ার: ৩০ মিলিমিটার (১.২ ইঞ্চি)

এসএমএস কমেট জার্মান রাজকীয় নৌবাহিনির একটি অ্যাভিসো জাহাজ, যা ছিল মিটিওর শ্রেনির দ্বিতীয় এবং শেষ সদস্য। এটি এসএমএস মিটিওরের অনুরূপ ও একই বৈশিষ্ট্যের জাহাজ ছিল। আক্রমণকারী টর্পেডো জাহাজের বিরুদ্ধে প্রধান নৌবহরকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, কমেট চারটি ৮.৮ সেমি (৩.৫ ইঞ্চি) নৌকামান দিয়ে সজ্জিত ছিল। ১৮৯০ সালে কমেট এজি ভালকান পোতাঙ্গনে পরে ছিল, ১৮৯২ সালে কমেটকে সক্রীয় করা হয় এবং ১৮৯৩ সালের এপ্রিলে কমিশন লাভ করে। অধিক কম্পন ও গভীর সমুদ্রে খারাপ পরিচালনা, ত্রুটিগত নকশার কারণে জাহাজটি বেশি ব্যবহার হয়নি। জার্মান নৌবাহিনী কমেটের বিভিন্ন সমস্যা ও ত্রুটি নিরসনে সফল হয়নি। অনুপযোগীতার কারণে ১৮৯৬ সালের মাঝে এটিকে যুদ্ধজাহাজারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। কমেটকে পরে নৌ মাইন সংরক্ষণকারী হাল্ক বা ভাসমান তবে সমুদ্রে গমনে অক্ষম জাহাজ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯২১ সালে জাহাজটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

মিটিওর শ্রেনির নকশা পরিকল্পনা ও ব্যবচ্ছেদের অংকিত চিত্র

দুই জাহাজের মধ্যে সৈন্য পরিবহনের জন্য ছোট জাহাজ—অ্যাভিসো যখন জার্মান নৌবহরের জন্য নকশা করা হয়, তখন প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল জাহাজগুলি বড় নৌবহরের জন্য আজ্ঞাবাহী স্কাউট হিসাবে কাজ করতে পারে একইসাথে প্রতিপক্ষের টর্পেডোবাহী জাহাজে বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে বৃহত্তর যুদ্ধজাহাজকে রক্ষা করতে পারে। নৌ-কমান্ড ১৮৮৮ সালে সিদ্ধান্ত নেয় যে অ্যাভিসোর পরবর্তী শ্রেনি—মিটিওরের নকশা—একমাত্র টর্পেডো বিরোধী জাহাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধের লক্ষ্যে নির্মাণ করা উচিত। মিটিওর-শ্রেনির অ্যাভিসো পূর্ববর্তী ওয়াচ-শ্রেণির অ্যাভিসোর চেয়ে ছোট এবং দ্রুতগতির; তবে অত্যন্ত ভারসম্যহীন এবং সমুদ্রে চলাচলের জন্য দূর্বল নৌকা ছিল। জাহাজগুলি উচ্চগতিতে চলার সময় তীব্র কম্পন হতো। এই ত্রুটিসমূহের প্রতিকার করা যায়নি। ফলস্বরূপ, জাহাজগুলির সেবাকাল সংক্ষিপ্ত ছিল।[][][]

কমেটের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ছিল ৭৯.৮৬ মিটার (২৬২.০ ফুট), বীম ছিল ৯.৫৮ মিটার (৩১.৪ ফুট) এবং পানিতে ভাসমান অবস্থায় জলরেখার নীচে সর্বোচ্চ ৩.৬৮ মিটার (১২.১ ফুট) ডুবে থাকে। খালি অবস্থায় ৯৯২ মেট্রিক টন, যুদ্ধের জন্য পূর্ণ বহর, রসদসহ ওজন ছিল ১,১১৭ মেট্রিক টন (১,০৯৯ লং টন; ১,২৩১ শর্ট টন)। এটির চালন ব্যবস্থায় ৩-সিলিন্ডার বিশিষ্ট দুটি উল্লম্ব তিনগুণ সম্প্রসারণশীল ইঞ্জিন ছিল। চারটি কয়লা-চালিত লোকোমোটিভ বয়লার দ্বারা ইঞ্জিনে বাষ্প সরবরাহ করা হ্তো। জাহাজের চালন ব্যবস্থা ৫০০০ মেট্রিক অশ্বক্ষমতা সম্পন্ন ছিল; যা সর্বোচ্চ ১৯.৫ নট (৩৬.১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা; ২২.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতি তুলতে পারতো। কমেটের সর্বোচ্চ ভ্রমণ পরিসীমা ছিল ৯৬০ নটিক্যাল মাইল (১,৭৮০ কিলোমিটার; ১,১০০ মাইল)। ভ্রমণ পরিসীমার মাঝে কমেট ৯ নট (১৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা; ১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতিতে টহল দিতে পারতো। কমেটে জনবহরে ৭ জন কর্মকর্তা ও ১০৮ জন তালিকাভূক্ত নাবিক ছিল।[]

নির্মাণের সময় কমেটের অস্ত্রবহর চারটি ৮.৮ সেমি (৩.৫ ইঞ্চি) নলের এসকে এল/৩০ নৌকামান দিয়ে সাজানো হয়। কামানগুলির দুটি জাহাজের সম্মুখে পাশাপাশি, অপর দুইটি দুইপাশে পিভট দিয়ে উচু করে স্থাপিত। কামানে ৪৬২ থেকে ৬৮০ রাউন্ড গোলাবারুদ ভরা থাকতো। এছাড়াও কমেটে ৩৫ সেমি (১৩.৮ ইঞ্চি) নলের তিনটি টর্পেডো টিউব আছে, এগুলির একটি সম্মুখে; অপর দুইটি দুই পাশে সজ্জিত ছিল। কমেটের পাটাতন একটি ১৫ মিমি (০.৫৯ ইঞ্চি) পুরু ও পাটাতনে ৩০ মিমি (১.২ ইঞ্চি) ইস্পাত প্রলেপের বর্মযুক্ত কনিং টাওয়ার ছিল।[]

পরিষেবা ইতিহাস

[সম্পাদনা]

কমেট নির্মাণের জন্য পোল্যান্ডের স্টেটিনের পোতাঙ্গন এজি ভলকানের সাথে চুক্তি করা হয়েছিল, তবে নির্মাণ শুরু উপলক্ষ্যে জাহাজের তলি নামানো- ১৮৯১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছিল; কারণ নৌবাহিনি কমেটের অনুরূপ জাহাজ মিটিওর থেকে প্রাথমিক পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করছিল। কিলে অবস্থিত জার্মান রাজকীয় নৌপোতাঙ্গন কাইজারলিখ ওয়ের্ফট-এর কমান্ডার অটো ফন ডিয়েডারাইখস ১৮৯২ সালের ১৫ নভেম্বর জাহাজটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নামকরণ করেছিলেন। পানিতে নামানোর পর, ১৮৯৩ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নৌবাহিনী এটির গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা পরিচালনা করেছিল। স্টেটিন থেকে কিলে নিয়ে যাওয়ার পর ২৯ এপ্রিল জাহাজটি কমিশন লাভ করে। ৬ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে আরো নিরীক্ষা চালানোর পর জাহাজটি সেবছরের জন্য সেবাদান থেকে বিরত ও বরখাস্ত করা হয়েছিল।[]

১৮৯৪ সালে কমেটকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পুনরায় কমিশন দেওয়া হয়। করভেট ক্যাপ্টেন হ্যানিং ফন হল্টজেনডর্ফের অধীনে ৫ থেকে ৩০ জন সক্রীয় ছিল। জাহাজটি ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত পরিষেবার বাইরে ছিল, যদিও কিছু ত্রুটি সংশোধন করার প্রয়াসে কমেটের কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। ১৮৯৫ সালের ২২ জানুয়ারি কমেটকে আরেক দফা সমুদ্র নিরীক্ষার জন্য পুনরায় কমিশন দেওয়া হয়েছিল; উত্তর সাগরে ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট লুডউইগ ব্রুচের অধীনে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত নিরীক্ষা চলেছিল। ২ মে জাহাজটি উইলহেম্সফেনে স্থানান্তর করা হয়, সেখানে কমেটকে পুনরায় পরিষেবা থেকে নিস্ক্রিয় করা হয়। পরের বছর কিলে স্থানান্তরিত হলে, কমেটকে আর কোনও সক্রিয় পরিষেবায় যুক্ত করা হয়নি। এসএমএস মিটিওয়ের মত কমেটের সেবাকাল নকশার গুরুতর ত্রুটির কারণে সংক্ষিপ্ত ছিল।[][]

নৌকমান্ডের এক আদেশবলে ১৮৯৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কমেটকে হালকা যুদ্ধপোত (ক্রুজার) জাহাজ হিসেবে পুনঃশ্রেনীবদ্ধ করা হয়। ১৯০১ সালের মাঝে আরো তিনটি পুরনো জাহাজের সাথে কমেটকে ড্যানজিগে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ১৯০৪ সালে ৩ মে, পোতাশ্রয় জাহাজের তালিকায় যুক্ত এবং একই সময়ে ড্যানজিগে একটি পোতাশ্রয় প্রতিরক্ষা জাহাজ হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। ১৯১১ সালের ২৪ জুন কমেটকে নৌবাহিনীর জাহাজতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯১৪ সালের জুনে জাহাজটিকে এমডেনে স্থানান্তর করা হয়। এমডেনে আরেক হালকা যুদ্ধপোত আরকোনার সমর্থনে নৌমাইন সংরক্ষণকারী হাল্ক বা ভাসমান তবে সমুদ্রে গমনে অক্ষম জাহাজ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯২১ সালে হামবুর্গে জাহাজটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।[][]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

গ্রন্থসূত্র

[সম্পাদনা]
  • গ্রোনার, এরিক (১৯৯০)। German Warships: 1815–1945 [জার্মান যুদ্ধজাহাজ: ১৮১৫–১৯৪৫] (ইংরেজি ভাষায়)। ১: মেজর সারফেস ভেসেলস। এনাপোলিস: নেভাল ইন্স্টিটিউট প্রেস। আইএসবিএন 978-0-87021-790-6 
  • হাইডেলব্র্যান্ড, হ্যান্স এইচ; রোর, আলবার্ট; স্টেইনমেট্জ, হ্যান্স-অটো (১৯৯৩)। Die Deutschen Kriegsschiffe: Biographien – ein Spiegel der Marinegeschichte von 1815 bis zur Gegenwart [জার্মান যুদ্ধজাহাজ: আত্মজীবনী − ১৮১৫ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নৌ ইতিহাসের প্রতিফলন] (জার্মান ভাষায়)। । রেটিনজেন: মুনডাস ভেরলাগ। আইএসবিএন 978-3-8364-9743-5 
  • লিয়ন, হিউ (১৯৭৯)। "জার্মানি"। গার্ডিনার, রবার্ট; চেসনিউ, রজার; কলেসনিক, ইউজিন এম। Conway's All the World's Fighting Ships 1860–1905সীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন [কনওয়ে'র পৃথিবীর সকল যুদ্ধ জাহাজ ১৮৬০–১৯০৫] (ইংরেজি ভাষায়)। গ্রিনউইচ: কনওয়ে মেরিটাইম প্রেস। আইএসবিএন 978-0-85177-133-5