† It received the status of a full-fledged State in 1971 by the North-Eastern Areas (Reorganisation) Act 1971
মেঘালয় (ইংরেজি: Meghalaya; /ˌmeɪɡəˈleɪə/,[৫] or /meɪˈɡɑːləjə/ অর্থ "মেঘের আবাসস্থল" সংস্কৃত মেঘা মানে "মেঘ" + আ-লয়া মানে "আবাস"), উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি আসাম রাজ্য থেকে দুটি জেলা নিয়ে মেঘালয় গঠিত হয়েছিল: ইউনাইটেড খাসি পাহাড় এবং জয়ন্তীয়া পাহাড় এবং গারো পাহাড়। মেঘালয় পূর্বে আসামের অংশ ছিল, কিন্তু ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি খাসি, গারো এবং জৈন্তিয়া হিলস জেলাগুলি মেঘালয়ের নতুন রাজ্য হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের হিসাবে মেঘালয়ের জনসংখ্যা অনুমান করা হয় ৩,২১১,৪৭৪ জন। মেঘালয় প্রায় ২২,৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যার দৈর্ঘ্য-থেকে-প্রশস্ত অনুপাত প্রায় ৩:১।
এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে আসাম রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অবস্থিত। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। ব্রিটিশ ভারতের সময় একে "প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড" বলা হতো। রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ বনভূমি। মেঘালয় উপ-ক্রান্তীয় বন ইকোরিজিয়ন রাজ্যটিকে ঘিরে রেখেছে; এর পর্বত অরণ্যগুলি উত্তর ও দক্ষিণে নিম্নভূমি ক্রান্তীয় বন থেকে পৃথক। স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং উদ্ভিদের জীববৈচিত্র্যের জন্য বনগুলি উল্লেখযোগ্য।
মেঘালয়ে প্রধানত একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক বন শিল্প সহ একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ফসল হল আলু, ধান, ভুট্টা, আনারস, কলা, পেঁপে এবং মশলা। পরিষেবা খাতটি রিয়েল এস্টেট এবং বীমা সংস্থাগুলি দ্বারা গঠিত। ২০১২ সালের জন্য মেঘালয়ের মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বর্তমান মূল্যে ₹১৬,১৭৩ কোটি (ইউএস$ ১.৯৮ বিলিয়ন) অনুমান করা হয়েছিল। রাজ্যটি ভূতাত্ত্বিকভাবে খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, তবে এর কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্প নেই। রাজ্যটিতে প্রায় ১,১৭০ কিমি (৭৩০ মা) জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের জন্য একটি প্রধান লজিস্টিক সেন্টার।
জুলাই ২০১৮ সালে, স্ট্রাটিগ্রাফির আন্তর্জাতিক কমিশন হোলোসিন যুগকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে, যেহেতু মাওমলুহ গুহায় একটি স্পেলিওথেম যা ২২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি একটি নাটকীয় বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ইভেন্টকে সীমানা স্ট্র্যাটোটাইপ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি, নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েট, শিলংয়ে অবস্থিত।
মেঘালয় সহ ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি বিশেষ আগ্রহের বিষয়। নব্যপ্রস্তরযুগ থেকে এখানে মানুষের বসবাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নব্যপ্রস্তরযুগের যেসকল চিহ্ন আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তার বেশিভাগই খাসি পাহাড়, গারো পাহাড় এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির উচ্চ উচ্চতা সম্পন্ন স্থানে অবস্থিত। এইসকল স্থানে ঝুম বা স্থানান্তর চাষ আজও প্রচলিত, যা নব্যপ্রস্তরযুগেও প্রচলিত ছিল। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও এখানকার উচ্চ-মালভূমি বন্যা এবং মৃত্তিকাক্ষয় থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। মানবসভ্যতার ধান চাষের ইতিহাসে মেঘালয়ের গুরুতব রয়েছে। ইয়ান গ্লোভার ধান চাষের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছেন- ভারত ধান ও অন্যান্যও ২০,০০০ প্রজাতির শস্য চাষের একটি প্রধান কেন্দ্রভুমি এবং উত্তরপূর্ব ভারত ধান চাষের একটি অনুকুল স্থান। মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চল প্রত্নতাত্ত্বিক সময় থেকে মানুষের বসবাসের চিহ্ন বহন করছে।
উনিশ শতকে ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে না আসা পর্যন্ত খাসি, গারো এবং জয়ন্তীয়া উপজাতিদের নিজস্ব রাজ্য ছিল। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেঘালয়কে আসামের অন্তর্ভুক্ত করে।[৬] ব্রিটিশ রাজের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কারণে এই স্থানটি অর্ধ-স্বাধীন মর্যাদা পেয়েছিল। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সময় মেঘালয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের একটি অংশ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রহিত হলে মেঘালয় পুনরায় আসাম প্রদেশের অংশে পরিণত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি ভারত শাসন আইন ১৯১৯-এর ৫২এ ধারা অনুযায়ী ভারতের গভর্নর-জেনারেল-ইন-কাউন্সিল খাসি রাজ্যগুলি বাদ দিয়ে মেঘালয় অঞ্চলগুলিকে "পশ্চাৎপদ এলাকা" হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে, ব্রিটিশ প্রশাসন ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ প্রণয়নের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলিকে "বর্জিত" এবং "আংশিকভাবে বর্জিত" অঞ্চল নামে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার সময়, বর্তমান মেঘালয় আসামের দুটি জেলা হিসেবে পুনর্গঠিত হয় এবং আসাম রাজ্যের মধ্যে সীমিত স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা পায়। মেঘালয় অধিবাসীরা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে একটি পৃথক পার্বত্য রাজ্যের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার আসাম রাজ্যের মধ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের জন্য একটি নীতি ঘোষণা করে, যেখানে ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের ২০নং অনুচ্ছেদের তালিকায় থাকা অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদনুসারে, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আসাম পুনর্গঠন (মেঘালয়) আইন নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের আইন প্রণীত হয়েছিল। আসাম রাজ্য দুটি জেলা: খাসি ও জয়ন্তীয়া পাহাড় এবং গারো পাহাড় নিয়ে মেঘালয় গঠিত হয়েছিল। ভূগোলবিদ শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তার লে প্লাটু দে মেঘালায়া(Le Plateau de Meghalaya) নামক গবেষণাপত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘপুঞ্জ সম্মিলিত পাহাড়ি অঞ্চলকে ''মেঘালয়'' নাম দিয়েছিলেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়ি অঞ্চলগুলি নিয়ে রাজ্য গঠনের সময় ভারত সরকারশিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া মেঘালয় নামটি গ্রহণ করে এবং মেঘালয় নামক পূর্ণরাজ্যের জন্ম হয়। ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুসারে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের ৩৭ সদস্যের আইনসভা থাকায় আইনটি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল কার্যকর হয়।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সাংসদে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল (পুনর্গঠন) আইন, ১৯৭১ পাশ হওয়ার পর মেঘালয়ের স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যকে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হয়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি থেকে মেঘালয় নিজস্ব বিধানসভা গঠন করে পূর্ণরাজ্যে পরিণত হয়।
মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলির অন্যতম। এর দক্ষিনে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ আর সিলেট, পশ্চিমে রংপুর, উত্তরে আর পূর্বে আসাম।প্রায় ২২,৪৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এর বিস্তৃতি
দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত ৩ঃ১। উপত্যকা আর মালভূমির মিশেলে পাহাড়ি মেঘালয় ভূতাত্ত্বিকভাবে সমৃদ্ধ। এখানে মূলত আছে আর্কিয়ান শিলা যেখানে কয়লা, লাইমস্টোন বা চুনাপাথর, ইউরেনিয়াম আর সেলেমেনাইটের মত মূল্যবান খনিজ মজুদ।
মালভূমিগুলোর উচ্চতা ১৫০ মিটার(৪৯০ ফুট) থেকে ১৯৬১ মিটার (৬৪৩৪ ফুট)পর্যন্ত হতে পারে। মূল অংশের খাসি পাহাড় এলাকার উচ্চতা সবচেইয়ে বেশি। এরপর আছে জৈন্তা পাহাড় এলাকা। মেঘালায়ের সর্বোচ্চ চূড়া শিলং চুড়া যার উচ্চতা ১৯৬১ মিটার। পশিচমের গারো পাহার এলাকা প্রায় সমতল। এখানের সর্বোচ্চ চুড়া নকরেক চুড়া যার উচ্চতা ১৫১৫ মিটার।
উমগট নদী
মেঘালয়ে অনেক নদী রয়েছে। এদের অধিকাংশই বৃষ্টিনির্ভর ও মৌসুমি হয়।গারো অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে গানোল, ডেরিং, সান্দা, বান্দ্রা, বুগাই, ডারেং, ভুপাই, নিতাই। মুলখন্ড আর পূর্বাংশে আছে খ্রি, উমতি, ডিগারি, উমিয়াম বা বড়পানি, কিনশি(জাদুকাটা),উমগি, উমঙ্গট, উমখেন, মাওপা, মিন্দু, মিনতেং, উমিয়াম খোয়ান।
মেঘালয়কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে আর্দ্র অঞ্চল। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত সর্বোচ্চ ১২,০০০ মিমি পর্যন্ত হতে পারে। পশ্চিমের গারো পাহাড়ের এলাকায় সাধারনত বছরের বেশির ভাগ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। আবার শিলং এর দিকে তাপমাত্রা কম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়না। শীতের সময় শুন্যের নিচে ও থাকতে পারে। শিলং এর দক্ষিনে সোহরা বা চেরাপুঞ্জি তে এক ক্যালেন্ডার মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আছে আর এক বছরের হিসেবে এ সর্বোচ্চ রেকর্ড মৌসিনরাম শহরের।
মেঘালয় রাজ্যের প্রায় ৭০% বনভূমি, যার মধ্যে ৯৪৯৬ বর্গকিমি(৩৬৬৬বর্গ মাইল) ঘন প্রাথমিক উপক্রান্তীয় বন। মেঘালয় বনাঞ্চলকে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী বোটানিকাল আবাসস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বনগুলি প্রচুর বৃষ্টিপাত পায় এবং বিভিন্ন ধরনের ফুল ও প্রাণীজগতের জীববৈচিত্র্যকে সমর্থন করে। মেঘালয়ের বনাঞ্চলের একটি ছোট অংশ "পবিত্র উদ্যান" নামে পরিচিত। এগুলি একটি প্রাচীন বনের ছোট পকেট যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারণে সম্প্রদায়ের দ্বারা শত শত বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই বনগুলো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত। এই পবিত্র বনে অনেক বিরল উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতি রয়েছে। পশ্চিম গারো পাহাড়ের নকরেক বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এবং দক্ষিণ গারো পাহাড়ের বালফাক্রম জাতীয় উদ্যান মেঘালয়ের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও এখানে তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে। এগুলি হল নংখাইলেম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সিজু অভয়ারণ্য এবং বাঘমারা অভয়ারণ্য, এটি পোকামাকড় খাওয়া কলসী উদ্ভিদ নেপেনথেস খাসিয়ানার আবাসস্থল যা গারো ভাষায় "মে'মাং কোকসি" নামেও পরিচিত।
বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর কারণে, মেঘালয়ের বনগুলিতে প্রচুর বৈচিত্র্যময় ফুল আছে। আরো আছে নানা ধরনের পরজীবী, এপিফাইট, রসালো উদ্ভিদ এবং গুল্ম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি গাছের জাত হল শোরিয়া রোবাস্টা (সাল গাছ) এবং টেকটোনা গ্র্যান্ডিস (সেগুন)। এছাড়াও মেঘালয় বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, মশলা এবং ঔষধি গাছের আবাসস্থল। মেঘালয় তার বৃহৎ বিভিন্ন ধরনের অর্কিডের জন্যও বিখ্যাত - প্রায় ৩২৫টি। এর মধ্যে খাসিয়া পাহাড়ের মাওসমাই, মাওমলুহ এবং সোহরারিম বনে সবচেয়ে বড় জাতটি পাওয়া যায়।
মেঘালয়ে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ এবং কীটপতঙ্গও রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে রয়েছে হাতি, ভাল্লুক, লাল পান্ডা,ছোট ভারতীয় সিভেট, মঙ্গুস, ওয়েসেল, ইঁদুর, গৌড়, বন্য মহিষ, হরিণ, বন্য শুকর এবং বেশ কিছু প্রাইমেট। মেঘালয়েও বাদুড়ের বিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে। মেঘালয়ের চুনাপাথরের গুহা যেমন সিজু গুহা দেশের কিছু বিরল বাদুড় প্রজাতির আবাসস্থল। সব জেলাতেই হুলক গিবন পাওয়া যায়।মেঘালয়ের সাধারণ সরীসৃপ হল টিকটিকি, কুমির এবং কাছিম। মেঘালয়ে অজগর, কপারহেড, গ্রিন ট্রি রেসার, ইন্ডিয়ান কোবরা, কিং কোবরা, কোরাল স্নেক এবং ভাইপার সহ বেশ কয়েকটি সাপ রয়েছে।
মেঘালয়ের বনাঞ্চলে ৬৬০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি হিমালয়ের পাদদেশ, তিব্বত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানীয়। মেঘালয়ের বনে পাওয়া পাখির মধ্যে ৩৪টি বিশ্বব্যাপী বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে এবং ৯টি গুরুতরভাবে বিপন্ন তালিকায় রয়েছে। পাখিদের মধ্যে রয়েছে ফ্যাসিয়ানডি, অ্যানাটিডি, পডিসিপিডিডি, সিকোনিডি, থ্রেসকিওরনিথিডি, আরডেইডি, পেলেকানিডি, ফ্যালাক্রোকোরাসিডে, অ্যানহিঙ্গিডে, ফ্যালকোনিডে, অ্যাসিপিট্রিডি, ওটিডিডাইডি, গিরিডাইডি। এই পরিবারের প্রত্যেকের অনেক প্রজাতি আছে। গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্নবিল মেঘালয়ের বৃহত্তম পাখি। অন্যান্য আঞ্চলিক পাখির মধ্যে রয়েছে ধূসর ময়ূর ফিজ্যান্ট, বড় ভারতীয় প্যারাকিট এবং সাধারণ সবুজ কবুতর। মেঘালয়ে ২৫০ টিরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে, যা ভারতে পাওয়া সমস্ত প্রজাপতির প্রায় এক চতুর্থাংশ।২০২০ সালে বিজ্ঞানীরা মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়ে সবচেয়ে বড় পরিচিত ভূগর্ভস্থ মাছ আবিষ্কার করেছেন।
১৯৭০ সালে রাজ্যের গঠনের পর প্রারম্ভিক ১১ বছর অল পার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্স দল ক্ষমতায় থাকে। তারপর বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে প্রায় ৩৭ বছর ধরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বেশিরভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে।
রাজ্যে ২টি লোকসভা আসন রয়েছে। একটি শিলং ও অপরটি তুরা। শিলং আসনটি ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর দখলে রয়েছে। তুরা আসনটি ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-এর অন্যতম শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির দখলে রয়েছে।
২০১৩ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জোট সরকার গঠন করে। ২০১৮-য় বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২০২০সালের আগস্ট থেকে মেঘালয়ের রাজ্যপাল হচ্ছেন সত্য পাল মালিক।
রাজ্য সরকার
মেঘালয় বিধানসভার বর্তমানে ৬০ জন সদস্য রয়েছে। মেঘালয়ের লোকসভায় দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন, একজন করে শিলং এবং তুরা থেকে। রাজ্যসভায় এর একজন প্রতিনিধিও রয়েছে।রাজ্য সৃষ্টির পর থেকে মেঘালয়ে গৌহাটি হাইকোর্টের এখতিয়ার রয়েছে। গুয়াহাটি হাইকোর্টের একটি সার্কিট বেঞ্চ ১৯৭৪ সাল থেকে শিলং-এ কাজ করছে। তবে মার্চ ২০১৩-এ মেঘালয় হাইকোর্ট গৌহাটি হাইকোর্ট থেকে আলাদা করা হয়েছে এবং এখন রাজ্যের নিজস্ব হাইকোর্ট রয়েছে।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন
গ্রামীণ জনসংখ্যাকে স্থানীয় স্ব-শাসনের যন্ত্র সরবরাহ করার জন্য, ভারতের সংবিধানে বিধান করা হয়েছিল; তদনুসারে, পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলি স্থাপিত হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বিরাজমান স্বতন্ত্র প্রথা ও ঐতিহ্যের কারণে এই অঞ্চলে একটি পৃথক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো থাকা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছিল।, এটা অনুভূত হয়েছিল যে পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলি এই ঐতিহ্যগত ব্যবস্থাগুলির সাথে সংঘর্ষে আসতে পারে।এসব কারণে গোপীনাথ বোর্দোলোইয়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি উপকমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ষষ্ঠ তফসিলটি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল এবং মেঘালয়ের এলাকা সহ উত্তর-পূর্বের কিছু গ্রামীণ এলাকায় স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদের গঠন প্রদান করা হয়েছে। মেঘালয়ের স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদসমূহ নিম্নরূপ:
মেঘালয় প্রধানত একটি কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। মেঘালয়ের মোট শ্রমশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত। যদিও রাজ্যের এনএসডিপিতে এই সেক্টরের অবদান মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বৃহৎ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্য ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে খাদ্য আমদানি করে।২০১২ সালের হিসাবে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনুসারে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২% দারিদ্র্য সীমার নীচে রয়েছে, মেঘালয়ের গ্রামীণ জনসংখ্যার ১২.৫% দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছে; যখন শহরাঞ্চলে, ৯.৩% দারিদ্র্যসীমার নিচে।
মেঘালয় মূলত একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য যার প্রায় ৮০% জনসংখ্যা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সম্পূর্ণরূপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। মেঘালয়ের ভৌগোলিক এলাকার প্রায় ১০% চাষের অধীনে। রাজ্যের কৃষি আধুনিক প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, কম ফলন এবং কম উৎপাদনশীলতার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ফলস্বরূপ, জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা কৃষিতে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও, রাজ্যের জিডিপিতে কৃষি উৎপাদনের অবদান কম এবং কৃষিতে নিয়োজিত জনসংখ্যার অধিকাংশই দরিদ্র থেকে যায়। চাষকৃত এলাকার একটি অংশ ঐতিহ্যগত পরিবর্তনশীল কৃষির অধীনে রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে ঝুম চাষ নামে পরিচিত।মেঘালয় ২০০১ সালে ২৩০,০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন করেছিল। ধান রাজ্যের প্রধান খাদ্যশস্য। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য হল ভুট্টা, গম,ডাল। এছাড়াও আলু, আদা, হলুদ, কালো মরিচ, সুতা, তেজপাতা (দারুচিনি তামলা), পান, খাটো তুলা, পাট, মেস্তা, সরিষা এবং রেপসিড ইত্যাদি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। রাজ্যটি তার উদ্যানজাত ফসল যেমন কমলা, লেবু, আনারস, পেয়ারা, লিচু, কলা, কাঁঠাল, বরই, নাশপাতি এবং পীচের জন্য বিখ্যাত।
তৈলবীজ যেমন রেপসিড, সরিষা, তিসি, সয়াবিন, ক্যাস্টর এবং তিল প্রায় ১০০ বর্গকিমি(৩৯বর্গ মাইল) উপর জন্মায়। প্রায় ৬.৫ হাজার টন তৈলবীজ উৎপাদনের দুই-রাইসরিষা এবং সরিষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৈলবীজ যা প্রায় ৬.৫ হাজার টন তৈলবীজ উৎপাদনের দুই তৃতীয়াংশ। তুলা, পাট এবং মেস্তার মতো আঁশ জাতীয় ফসল মেঘালয়ের একমাত্র অর্থকরী ফসল, গারো পাহাড়ে জন্মে। মেঘালয়ের জলবায়ু পরিস্থিতি ফল, শাকসবজি, ফুল, মশলা, মাশরুম এবং ঔষধি গাছ সহ প্রচুর পরিমাণে উদ্যান ফসলের অনুমতি দেয়। এগুলিকে উচ্চমূল্যের ফসল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে গৃহস্থালীর খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগগুলি ব্যাপকভাবে কৃষকদের তাদের গ্রহণ করতে বাধা দিয়েছে। উত্থিত গুরুত্বপূর্ণ ফলগুলির মধ্যে রয়েছে সাইট্রাস ফল, আনারস, পেঁপে এবং কলা। এগুলি ছাড়াও, রাজ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং মূলা সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি জন্মে। সারা রাজ্যে, বিশেষ করে গুয়াহাটি থেকে শিলং যাওয়ার রাস্তার চারপাশে অ্যারেকা বাদামের বাগান দেখা যায়। চা, কফি এবং কাজু-এর মতো অন্যান্য আবাদের ফসল ইদানীং চালু হয়েছে এবং সাধারণ হয়ে উঠছে।
মেঘালয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ ভিত্তি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা, চুনাপাথর, সিলিমানাইট, কাওলিন এবং গ্রানাইটের মতো খনিজ। মেঘালয়ে বিশাল বনভূমি, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং অসংখ্য জলাশয় রয়েছে। শিল্পায়নের নিম্ন স্তর এবং তুলনামূলকভাবে দুর্বল অবকাঠামোর ভিত্তি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বার্থে এই প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণে বাধা হিসাবে কাজ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জৈন্তিয়া হিলস জেলায় ৯০০ MTD-এর বেশি উৎপাদন ক্ষমতা সহ দুটি বড় সিমেন্ট উত্পাদন কারখানা এসেছে এবং এই জেলায় উপলব্ধ অত্যন্ত উচ্চ মানের চুনাপাথরের সমৃদ্ধ আমানত ব্যবহার করার জন্য আরও কয়েকটি পাইপলাইনে রয়েছে।
মেঘালয়ে একটি বিশাল, অব্যবহৃত জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা আছে। মূল্যায়িত উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০০মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। রাজ্যে বর্তমান ইনস্টল ক্ষমতা ১৮৫মেগাওয়াট, কিন্তু রাজ্য নিজেই ৬১০ মেগাওয়াট ব্যবহার করে। এটি বিদ্যুৎ আমদানি করে। রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। রাজ্যের নেট জলবিদ্যুৎ-উত্পাদিত বিদ্যুৎ রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য আয় উপার্জন সম্ভাবনাময়।রাজ্যে কয়লারও বড় আমানত রয়েছে।ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপযুক্ত।
বেশ কিছু প্রকলপ আছে। নাঙ্গলবিবরায় প্রস্তাবিত গারো হিলস তাপ প্রকল্পটি অতিরিক্ত ৭৫১মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে বলাহচ্ছে। পশ্চিম খাসি পাহাড়ে ২৫০মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ২০০০-২৫০০মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রাখে, যার মধ্যে ৭০০-৯৮০মেগাওয়াট হবে তাপভিত্তিক এবং ১৪০০-১৫২০মেগাওয়াট হবে জলবিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি খরচ-শেয়ারড পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের জেনারেশন ট্রান্সমিশন, ট্রান্সফরমেশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন মেঘালয় এনার্জি কর্পোরেশন লিমিটেডের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে যা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অ্যাক্ট, ১৯৪৮ এর অধীনে গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে পাঁচটি হাইডেল পাওয়ার স্টেশন এবং একটি মিনি হাইডেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে উমিয়াম হাইডেল প্রোজেক্ট, উমট্রিউ হাইডেল প্রোজেক্ট, Myntdu-Leshka-I হাইডেল প্রজেক্ট, এবং সুনাপানি মাইক্রো হাইডেল (SESU) প্রোজেক্ট।ভারতের ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য রাজ্যে আরও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে: কিনশি (৪৫০ মেগাওয়াট), উমঙ্গি −1 (৫৪ মেগাওয়াট), উমিয়াম-উমট্রু-ভি (৩৬মেগাওয়াট), গনোল (২৫মেগাওয়াট), মাউফু (১২০মেগাওয়াট), নংকোলাইত (১২০মেগাওয়াট), নোংনাউ (৫০ মেগাওয়াট), রাংমাও (৬৫মেগাওয়াট), উমঙ্গোট (২৬০মেগাওয়াট), উমদুনা (৫৭মেগাওয়াট), মিন্টডু-লেশকা-II (৬০মেগাওয়াট), সেলিম (১৭০মেগাওয়াট) এবং মাবলেই (১৪০ মেগাওয়াট)।
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মেঘালয়ের সাক্ষরতার হার ছিল ৬২,৫৬ এবং এটি ভারতের ২৭তম সাক্ষর রাজ্য। ২০১১ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫.৫-এ দাঁড়িয়েছে।২০০৬ সালের হিসাবে, রাজ্যে যথাক্রমে ৫৮৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৫৯টি মধ্য বিদ্যালয় এবং ৬৫৫টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল।২০০৮সালে ৫১৮০০০ শিক্ষার্থী এর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ২৩২০০০উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত হয়েছিল। রাষ্ট্র তার স্কুলের মান, প্রবেশাধিকার, অব রাষ্ট্র তার স্কুলের মান, প্রবেশাধিকার, অবকাঠামো এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষণ করে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ইউএসটিএম) এর মতো উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান শিলং-এ রয়েছে।ইউএসটিএম প্রথম ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেটি আইবিএম এবং পেট্রোলিয়াম ও শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অধ্যয়নের ক্ষেত্র হিসাবে ক্লাউড কম্পিউটিং ইঞ্জিনিয়ারিং চালু করেছে। আইআইএম শিলং দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি।
রাজ্যে ১৩টি রাজ্য সরকারি ডিসপেনসারি, ২২টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ৯৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৪০৮টি সাব-কেন্দ্র রয়েছে। ২০১২সাল পর্যন্ত ৩৭৮জন ডাক্তার, ৮১ জন ফার্মাসিস্ট, ৩৩৭জন স্টাফ নার্স এবং.৭৭ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান ছিলেন। যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ক্যান্সার এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকার একটি বিশেষ কর্মসূচি চালু করেছে।মৃত্যুর হারে ক্রমাগত পতন হয়েছে, আয়ুষ্কালের উন্নতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ অনুসারে রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪২.৩% এখনও স্বাস্থ্যসেবা দ্বারা উন্মোচিত। বেসরকারী এবং সরকারী উভয় ধরনের অসংখ্য হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে তাদের । বেসরকারী এবং সরকারী উভয় ধরনের অসংখ্য হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে তাদের মধ্যে কয়েকটি হল সিভিল হাসপাতাল, গণেশ দাস হাসপাতাল, কে.জে.পি. Synod হাসপাতাল, NEIGRIHMS, North Eastern Institute of Ayurveda & Homeopathy (NEIAH), RP চেস্ট হাসপাতাল, উড ল্যান্ড হাসপাতাল, নাজারেথ হাসপাতাল, খ্রিস্টান হাসপাতাল ইত্যাদি।
২০১৬ সালের তথ্যানুসারে জনসংখ্যা প্রায় ৩,২১১,৪৭৪ জন।[৭]
জাতিগত গোষ্ঠী(২০১১):
খাসি: ৩৪%
গারো: ৩০.৫%
জয়ন্তিয়া: ১৮.৫%
বাঙালি: ৮.৫%
নেপালি: ২.৫%
হাজং: ১.২%
বাইট: ১.১%
কোচ: ১.০%
তিওয়া (লালুং): ০.৯%
রাভা: ০.৮%
কুকি: ০.৫%
শায়খঃ ০.৩%
অন্যান্য: ০.২%
উপজাতিরা মেঘালয়ের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ। খাসিরা হল বৃহত্তম গোষ্ঠী, তারপর গারোরা তারপর জৈন্তিয়ারা। এগুলি ব্রিটিশদের কাছে "পার্বত্য উপজাতি" নামে পরিচিত ছিল। অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, হাজং, বাইট, কোচ এবং সংশ্লিষ্ট রাজবংশী, বোরো, ডিমাসা, কুকি, লাখর, তিওয়া (লালুং), কার্বি, রাভা এবং নেপালি।২০১১ সালের আদমশুমারির অস্থায়ী রিপোর্ট অনুসারে, মেঘালয় উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক ২৭.৮২% জনসংখ্যা বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, রাজ্যে লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৮৬জন মহিলা যা ৯৪০এর জাতীয় গড় থেকে অনেক বেশি। ৯৮৫এর শহুরে মহিলা লিঙ্গ অনুপাত ৯৭২-এর গ্রামীণ লিঙ্গ অনুপাতের চেয়ে বেশি। ]
এখানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বিদ্যমান। উত্তরাধিকার আর বংশপরম্পরা মেয়েদের পরিবার হতেই নিয়ন্ত্রিত।পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে সব সম্পত্তির মালিক হয় এবং সেই বাবামায়ের দেখাশোনা করে। যেসব পরিবারে কন্যাসন্তান নাই তারা পুত্রবধূকে পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ
মেঘালয়ের সিভিল সোসাইটি রাজ্যের জনগণকে একটি সমষ্টিগত সম্প্রদায় হিসাবে বিবেচনা করে যা নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলির (CSOs) মাধ্যমে বিদ্যমান এবং জনসাধারণের সাধারণ স্বার্থ পরিবেশন করে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বিস্তৃত বর্ণালী বেসরকারী সংস্থা (এনজিও), অন্যান্য কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন এবং ফাউন্ডেশন। বর্তমানে ১৮১টিরও বেশি এনজিও রয়েছে যা দাতব্য সংস্থা থেকে স্বেচ্ছাসেবক পরিষেবা এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন গোষ্ঠীতে পরিবর্তিত হয়। বেশিরভাগ সুশীল সমাজের সংস্থাগুলিও জাতিগতভাবে যুক্ত কারণ প্রতিটি সংস্থার মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়। এর ফলে তারা রাজ্যের চারপাশের জাতিগত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। তিনটি ছাত্র সংগঠন যারা মেঘালয়ের প্রধান জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে: খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (কেএসইউ), জান্তিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জেএসইউ), এবং গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জিএসইউ)।
এছাড়াও অনেক ধরনের কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে যা সম্প্রদায় নির্মাণের ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এই যেমন খেলাধুলা, ধর্মীয়, শিক্ষাগত, এবং অন্যান্য ক্লাব যে তাদের স্বার্থের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সামাজিক চেনাশোনা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত।
মেঘালয়ের নাগরিক সমাজের জনহিতকর ভিত্তিগুলি তার নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রচেষ্টা করে। ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন (পিএইচএফআই) সম্প্রতি মেঘালয় সরকারের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।মেঘালয়ের নাগরিক সমাজের কার্যকারিতা নিয়ে পণ্ডিতরা বিভক্ত। কেউ কেউ CSO-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পক্ষে যুক্তি দেন, অন্যরা উল্লেখ করেন যে তাদের প্রভাব শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার সামরিক বাহিনী দ্বারাই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা নীচে থেকেও রয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, যেমন ভারতীয় রাজ্যে সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রতিবেশী শত্রু দেশ এবং স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির একীকরণ, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বে কীভাবে কাজ করে তার উপর জোর দেওয়ার দীর্ঘস্থায়ী বিন্দু হিসেবে কাজ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA) যেটি ১৯৫৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পাস হয়েছিল, এই এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একচেটিয়া ক্ষমতা প্রদান করে। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি অনেক বিদ্রোহী সংগঠনও গড়ে উঠেছিল, যা একটি সুশীল সমাজ গঠন থেকে তাদের আলাদা করা খুবই কঠিন করে তোলে। এই দুটি কারণের সমন্বয়ে CSO-কে সহজে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা যায় এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠনের সাথে দলবদ্ধ করা হয়, এইভাবে মেঘালয়ের সুশীল সমাজকে সামগ্রিকভাবে সীমাবদ্ধ করে।
ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান
তিনটি প্রধান জাতিগত উপজাতীয় গোষ্ঠী, যথা, খাসি, জৈন্তিয়া এবং গারোদেরও তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা শত শত বছর ধরে বিদ্যমান। এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি মোটামুটি ভালভাবে উন্নত ছিল এবং বিভিন্ন স্তরে কাজ করে, যেমন গ্রাম স্তর, গোষ্ঠী স্তর, এবং রাজ্য স্তর।
খাসিদের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, প্রতিটি গোত্রের নিজস্ব পরিষদ রয়েছে যা দরবার কুর নামে পরিচিত যার সভাপতিত্ব করেন গোত্র প্রধান। পরিষদ বা দরবার বংশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি পরিচালনা করত। একইভাবে, প্রতিটি গ্রামে একটি স্থানীয় সমাবেশ রয়েছে যা দরবার শ্নং নামে পরিচিত, অর্থাৎ গ্রাম দরবার বা পরিষদ, যার সভাপতিত্ব করেন গ্রামের প্রধান। সংলগ্ন খাসি গ্রামগুলি নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ইউনিটের মাধ্যমে আন্তঃগ্রাম সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা হয়েছিল। স্থানীয় রাজনৈতিক ইউনিটগুলিকে রেইড বলা হয়, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের অধীনে সাইমশিপ নামে পরিচিত। সাইমশিপ হল বেশ কয়েকটি অভিযানের মণ্ডলী এবং একজন নির্বাচিত প্রধানের নেতৃত্বে থাকে যাকে সাইম (রাজা) বলা হয়। সিম একটি নির্বাচিত রাজ্য পরিষদের মাধ্যমে খাসি রাজ্য শাসন করে, যা দরবার হিমা নামে পরিচিত। সিমেরও তার মন্ত্রী (মন্ত্রী) রয়েছে যাদের পরামর্শ তিনি নির্বাহী দায়িত্ব পালনে ব্যবহার করবেন। করগুলিকে বলা হত পিনসুক, এবং টোলগুলিকে বলা হত খরং, পরবর্তীটি রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রাথমিক উত্স। বিশ শতকের গোড়ার দিকে, রাজা দাখোর সিং ছিলেন খইমিরের সিয়াম।
সজৈন্তিয়াদেরও ত্রি-স্তরীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে খানিকটা খাসিদের মতো, যার মধ্যে রয়েছে রেইডস এবং সাইয়েম। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডলোইস, যারা রেইড স্তরে কার্যনির্বাহী এবং আনুষ্ঠানিক কার্য সম্পাদনের জন্য দায়ী। সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছেন গ্রামের প্রধানরা। প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরের নিজস্ব নির্বাচিত কাউন্সিল বা দরবার রয়েছে।
গারোদের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, গারো গ্রামগুলির একটি দল আকিং গঠন করে। অকিং নোকমাসের তত্ত্বাবধানে কাজ করে, যা সম্ভবত গারোদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব। নকমা বিচারিক এবং আইনী উভয় কার্য সম্পাদন করে। নোকমাস আন্তঃ-কিং সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্যও একত্রিত হয়। গারোদের মধ্যে কোন সুসংগঠিত পরিষদ বা দরবার নেই।
খাসি নাচ খাসি জীবনের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু, এবং উত্তরণের আচারের একটি অংশ। শ্নং (গ্রাম), একটি রেইড (গ্রামের দল), এবং হিমা (অভিযানের সমষ্টি) নৃত্য পরিবেশিত হয়। কিছু উৎসবের মধ্যে রয়েছে কা শাদ সুক মাইনসিয়েম, কা পম-ব্লাং নংক্রেম, কা-শাদ শিংউইয়াং-থাঙ্গিয়াপ, কা-শাদ-কিনজোহ খাসকাইন, কা বাম খান শ্নং, উমসান নংখারাই, শাদ বেহ সিয়ের।
জৈন্তিয়া
জৈন্তিয়া পাহাড়ের উত্সব তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি তার মানুষের মধ্যে প্রকৃতি, ভারসাম্য এবং সংহতি উদযাপন করে। জৈন্তিয়াদের উৎসবের মধ্যে রয়েছে বেহদিয়েনখলাম, লাহো নৃত্য, বপনের আচার অনুষ্ঠান।
গারো
গারোদের উৎসবগুলি তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, প্রকৃতি এবং ঋতুর পাশাপাশি ঝুম চাষের পর্যায়গুলির মতো সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানগুলিতে এক হত। গারোদের প্রধান উত্সবগুলি হল ডেন বিলসিয়া, ওয়ানগালা, রোংচু গালা, মি আমুয়া, ম্যাঙ্গোনা, গ্রেংডিক বাএ, জামাং সিয়া, জা মেগাপা, সা সাত রা চাকা, আজেওর আহাওয়া, ডোরে রাতা নৃত্য, চাম্বিল মেসারা, দো'ক্রুসুয়া, সারাম চা' A, A Se Mania বা Tata যা উদযাপন করেছে।
হাজং
হাজংরা ঐতিহ্যবাহী উৎসব এবং হিন্দু উৎসব উভয়ই উদযাপন করে। গারো পাহাড়ের পুরো সমতল বলয়ে হাজংদের বসবাস, তারা একটি কৃষিপ্রধান উপজাতি। প্রধান ঐতিহ্যবাহী উত্সবগুলির মধ্যে রয়েছে পুস্নে', বিশ্বে', কাটি গাসা, বাস্তু পুজে' এবং চোর মাগা।
বাইটস
বাইটদের অনেক ধরনের উৎসব আছে; নুল্ডিং কুট, পামচার কুট, লেবাং কুট, ফাভাং কুট ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য। যাইহোক, অতীতের মতন, তারা আর 'নুল্ডিং কুট' ছাড়া সেই উত্সবগুলি পালন করে না বা পালন করে না৷ নুল্ডিং কুট ("জীবনের পুনর্নবীকরণ") উত্সবটি প্রতি জানুয়ারিতে গাওয়া, নাচ এবং ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলির সাথে পালন করা হয় — পুরোহিতের পরে (থিয়াম্পু) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের আশীর্বাদ করার জন্য চুং পাথিয়ানের কাছে প্রার্থনা করুন।
ইংরেজি এখানকার দাপ্তরিক ভাষা।খাসি ভাষা (৩৩.৮২%)ও গারো ভাষা (৩১.৬০%) এই রাজ্যের প্রধান দুই প্রচলিত ভাষা। অন্যান্য ভাষার মধ্যে রয়েছে নার, বাংলা, নেপালি, অয়ার, হিন্দি, হাজং, অসমিজ।
খাসি ভাষা হল অস্ট্রো এশীয় ভাষার মন খের গোত্রের। এ ভাষার অনেক শব্দ আর্য ভারতীয় ভাষা যেমন অসমিহ, বাংলা, নেপালি ভাষা থেকে নেয়া। গারো ভাষা আবার কচ আর বডো ভাষার সাথে সম্পর্কিত। এর আছে অনেক উপভাষা যেমন আবেং, চিবক, মাতাবেং, আতং, মাচি ডুয়াই, রুগা, গারা গাঞ্চিং। জৈন্তা পাহাড়ের পূর্ব আর পশ্চিমের অধিবাসিরা নার ভাষায় কথা বলে।
মেঘালয় ভারতের তিনটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের মধ্যে একটি।
১৮৩০ সালে বাপিস্ট ধর্মপ্রচারকরা এখানে খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময় উপজাতিদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে পরে। রাজ্যের ৭৫% মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুগামী যেখানে প্রেসবিটারিয়ান, ব্যাপটিস্ট, চার্চ অফ গড এবং ক্যাথলিকরা বেশি। মেঘালয়ের মানুষের ধর্ম তাদের জাতিসত্তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গারো উপজাতির প্রায় ৯০% এবং খাসিদের প্রায় ৮০% খ্রিস্টান, যেখানে ৯৭% এরও বেশি হাজং, ৯৮.৫৩% কোচ, এবং ৯৪.৬০% রাভা উপজাতি হিন্দু।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১১.৫২% হিন্দু যা মেঘালয়ের ধর্মীয় সংখ্যালঘু। নারতিয়াং দুর্গা মন্দির মেঘালয়ের একটি প্রধান হিন্দু মন্দির এবং এটি পৃথিবীর.৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি।
মুসলমানরা জনসংখ্যার ৪.৩৯% গঠন করে।
জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলাটি ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়েছিল। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এর মোট ভৌগোলিক এলাকা ৩৮১৯বর্গ কিলোমিটার (১৪৭৫বর্গ মাইল) এবং জনসংখ্যা ২৯৫,৬৯২। জেলা সদর জোওয়াই। জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলা রাজ্যের বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী। এখন সিমেন্ট শিল্পের চাহিদা বাড়ায় রাজ্যে চুনাপাথরের উৎপাদন বাড়ছে।সম্প্রতি, এ বড় জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় এবং পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়।
পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলাটি ২৮অক্টোবর ১৯৭৬ সালে খাসি পাহাড় থেকে খোদাই করা হয়েছিল। জেলাটি ২৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার (১০৬১ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এর জনসংখ্যা ৬৬০,৯২৩জন। পূর্ব খাসি পাহাড়ের সদর দপ্তর শিলং-এ অবস্থিত।
রি-ভোই জেলাটি ৪ জুন ১৯৯২ সালে পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার আরও বিভাজনের দ্বারা গঠিত।এর আয়তন ২৪৪৮বর্গ কিলোমিটার (৯৪৫বর্গ মাইল)। ২০০১সালের আদমশুমারিতে জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৯২,৭৯৫জন। জেলা সদর নংপোহে অবস্থিত। এর একটি বড় অংশ বনে আচ্ছাদিত। এ জেলা আনারসের জন্য পরিচিত এবং রাজ্যের সবচেয়ে বড় আনারস উৎপাদন এখানেই হয়।
রাজ্যের বৃহত্তম জেলা পশ্চিম খাসি পার্বত্য জেলা যার ভৌগোলিক এলাকা ৫২৪৭ বর্গ কিলোমিটার (২০২৬ বর্গ মাইল)। জেলাটি ২৮ অক্টোবর ১৯৭৬সালে খাসি পার্বত্য জেলা থেকে খোদাই করা হয়েছিল। জেলা সদর দপ্তর নংস্টোইনে অবস্থিত।
পূর্ব গারো পার্বত্য জেলাটি ১৯৭৬ সালে গঠিত হয়েছিল,জনসংখ্যা ২৪৭,৫৫৫জন। এটি ২৬০৩বর্গ কিলোমিটার (১০০৫বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে। জেলার সদর দপ্তর উইলিয়ামনগরে, যা আগে সিমসাংগিরি নামে পরিচিত। এই জেলার একটি শহর নোঙ্গলবিবরাতে অনেক কয়লা খনি রয়েছে। এনএইচ৬২এর মাধ্যমে কয়লা গোয়ালপাড়া এবং জোগিঘোপায় পরিবহন করা হয়।
পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা রাজ্যের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং ৩৭১৪বর্গ কিলোমিটার (১৪৩৪ বর্গ মাইল) ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে রয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে জেলার জনসংখ্যা ৫১৫,৮১৩জন। জেলার সদর দপ্তর তুরায় অবস্থিত।
পশ্চিম গারো পার্বত্য জেলাকে বিভক্ত করার পর 18 জুন 1992 সালে অস্তিত্ব লাভ করে দক্ষিণ গারো পার্বত্য জেলা। জেলার মোট ভৌগোলিক এলাকা হল ১৮৫০ বর্গ কিলোমিটার (৭১০বর্গ মাইল)। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে জেলার জনসংখ্যা হল ৯৯,১০০ জন। জেলার সদর দফতর বাগমারা।
২০১২সালে, মেঘালয়ে ১১টি জেলা, ১৬টি শহর এবং আনুমানিক ৬০২৬টি গ্রাম ছিল। ১২ তম জেলা, পূর্ব পশ্চিম খাসি পাহাড় ২০২১ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
মেঘালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বা বেসরকারিভাবে পরিচালিত।শিক্ষার মূল মাধ্যম ইংরেজি। ঐচ্ছিক হিসেবে শিখানো হয় অসমিজ,বাংলা,হিন্দি, গারো,উর্দু,খাসি,মিজো,নেপালি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি ভারতীয় স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার কাউন্সিল (CISCE), সেন্ট্রাল বোর্ড ফর সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুল (NIOS) বা মেঘালয় বোর্ড অফ স্কুল এডুকেশনের সাথে অনুমোদিত।10+2+3 পরিকল্পনার অধীনে মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পরে শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই বছরের জন্য একটি জুনিয়র কলেজে নথিভুক্ত করে, যা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় নামেও পরিচিত, বা মেঘালয় বোর্ড অফ স্কুল এডুকেশনের সাথে অনুমোদিত উচ্চ মাধ্যমিক সুবিধা সহ স্কুলের কেন্দ্রীয় বোর্ড। শিক্ষার্থীরা তিনটি ধারার মধ্যে একটি থেকে বেছে নেয়: উদার শিল্প, বাণিজ্য বা বিজ্ঞান। প্রয়োজনীয় কোর্সওয়ার্ক শেষ করার পরে, শিক্ষার্থীরা সাধারণ বা পেশাদার ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলিতে নথিভুক্ত হতে পারে।
মেঘালয় একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক ছোট বসতি রয়েছে। সড়কই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। রাজধানী শিলং তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে সংযুক্ত হলেও অন্যান্য অংশে সড়ক যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে দুর্বল। রাজ্যের রাস্তাগুলির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও কাঁচা। মেঘালয়ে বেশিরভাগ আগমন প্রতিবেশী আসামের গুয়াহাটির মাধ্যমে হয়, যা প্রায় ১০৩কিলোমিটার দূরে। আসামের একটি প্রধান রেলপথের পাশাপাশি দেশের বাকি অংশে নিয়মিত ট্রেন এবং বিমান পরিষেবা সহ একটি বিমানবন্দর রয়েছে।
১৯৭২ সালে যখন মেঘালয় আসাম থেকে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসাবে খোদাই করা হয়েছিল, তখন এটি উত্তরাধিকারসূত্রে ২৭৮৬কিলোমিটার রাস্তার দৈর্ঘ্য পেয়েছিল যার মধ্যে ১৭৪কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে এবং প্রতি ১০০বর্গ কিলোমিটারে ১২.৪২কিলোমিটার রাস্তার ঘনত্ব রয়েছে। ২০০৪সাল নাগাদ, মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ৯৩৫০কিমি পর্যন্ত পৌঁছেছে যার মধ্যে ৫৮৫৭ কিমি উর্ধ্বমুখী হয়েছে। মার্চ ২০১১ সাল নাগাদ প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে রাস্তার ঘনত্ব বেড়ে ৪১.৬৯ কিমি হয়েছে।
এখানে প্রায় ৭৬৩৩কিলোমিটার রাস্তার নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার মধ্যে ৩৬৯১কিলোমিটার কালো-শীর্ষ এবং বাকি ৩৯৪২কিলোমিটার নুড়িযুক্ত। মেঘালয় আসামের শিলচর, মিজোরামের আইজল এবং ত্রিপুরার আগরতলার সাথে জাতীয় সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত। অনেক ব্যক্তিগত বাস এবং ট্যাক্সি অপারেটর গুয়াহাটি থেকে শিলং পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। যাত্রায় সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। শিলং থেকে মেঘালয়ের সমস্ত বড় শহর এবং আসাম এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির অন্যান্য রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে দিন এবং রাতের বাস পরিষেবা লক্ষনীয়।
শিলং বিমানবন্দর রাজ্যের প্রধান ও বৃহত্তম বিমানবন্দর। এর রানওয়ে মাত্র ১.৮ কিমি লম্বা।গুয়াহাটি-শিলং হাইওয়েতে শিলং থেকে ৩০কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূরে উমরোইতে একটি বিমানবন্দর রয়েছে। একটি নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং ₹৩০ কোটি (ইউএসডি ৩.৯ মিলিয়ন) ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল এবং জুন ২০১১সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়া রিজিওনাল এই বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। শিলং থেকে গুয়াহাটি এবং তুরার সাথে সংযোগকারী একটি হেলিকপ্টার পরিষেবাও রয়েছে। তুরার কাছে বালজেক বিমানবন্দর ২০০৮ সালে চালু হয়। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এএআই) এটিআর ৪২/এটিআর ৭২ ধরনের বিমান চালানোর জন্য বিমানবন্দরটি বিকাশ করছে। শিলং থেকে প্রায় ১২৪ কিলোমিটার (৭৭ মাইল) দূরে বোরঝার, গুয়াহাটি বিমানবন্দর (IATA: GAU) সহ অন্যান্য কাছাকাছি বিমানবন্দরগুলি আসামে রয়েছে।
বর্তমানে আসাম সীমান্তবর্তী রাজ্যের উত্তর পশ্চিমে উত্তর গারো পাহাড় জেলা-র 'মেন্দিপাথর পর্যন্ত রেলপথ বিস্তৃত হয়েছে। মেন্দিপাথর এবং আসামেরগুয়াহাটি সংযোগকারী নিয়মিত ট্রেন পরিষেবা ৩০ নভেম্বর ২০১৪ এ শুরু হয়েছে। চেরা কোম্পানিগঞ্জ রাজ্য রেলওয়ে রাজ্যের মধ্য দিয়ে একটি প্রাক্তন পর্বত রেলপথ ছিল। গুয়াহাটি (শিলং থেকে ১০৩কিলোমিটার (৬৪মাইল)) একটি ব্রডগেজ ট্র্যাক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সাথে দেশের বাকি অংশের সাথে সংযোগকারী নিকটতম প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। মেঘালয়ের মধ্যে গুয়াহাটি থেকে বাইরনিহাট (গুয়াহাটি থেকে ২০ কিলোমিটার (১২মাইল)) পর্যন্ত রেল সংযোগ প্রসারিত করার এবং রাজ্যের রাজধানী শিলং পর্যন্ত এটিকে আরও প্রসারিত করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তেলিয়া জংশন থেকে শিলং পর্যন্ত নতুন রেলপথের নির্মাণ হচ্ছে। বর্তমানে কমলাজারি পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, যদিও রেল চলাচল শুরু হয়নি।
মেঘালয় টাইমস: মেঘালয় টাইমস বাজারে নতুন প্রবেশকারীদের মধ্যে এবং রাজ্যের দ্রুতবর্ধমান সংবাদপত্র। অল্প সময়ের মধ্যে, এটি ইতোমধ্যে রাজ্য জুড়ে বিশাল পাঠক তৈরি করেছে।
সালান্তিনি জানেরা: সালান্তিনি জানেরা রাজ্যের প্রথম গারো ভাষার দৈনিক।
শিলং সময়: শিলং সময় রাজ্যের প্রথম হিন্দি দৈনিক।
দ্য শিলং টাইমস: শিলং টাইমস এই অঞ্চলের প্রাচীনতম ইংরেজি সংবাদপত্রগুলির মধ্যে একটি।
দ্য মেঘালয় গার্ডিয়ান: মেঘালয় গার্ডিয়ান রাজ্যের প্রাচীনতম সংবাদপত্রগুলির মধ্যে একটি।
আরো কিছু দৈনিক আর সাপ্তাহিকের মধ্যে আছেঃ
দ্য তুরা টাইমস: তুরা টাইমস প্রথম ইংরেজি দৈনিক যা তুরা থেকে প্রকাশিত হয়।
সালান্তিনি কু'রাং: সালান্তিনি কু'রাং হল দ্য তুরা টাইমস-এর গারো সংস্করণ, প্রিংপ্রাংনি আস্কি হল সবচেয়ে সাম্প্রতিক গারো ভাষায় প্রচারিত সংবাদপত্র।
উ নোংসাইন হিমা: উ নোংসাইন হিমা হল মেঘালয়ের সবচেয়ে পুরনো প্রচারিত খাসি সংবাদপত্র। ১৯৬০ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত, এটি এখন সর্বোচ্চ প্রচারিত খাসি দৈনিক (এবিসি জুলাই - ডিসেম্বর ২০১৩)।
মাওফর': এটি মেঘালয়ের জোওয়াইতে প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রগুলির মধ্যে একটি।
সাপ্তাহিক কর্মসংস্থান নিউজলেটার যা রাজ্য জুড়ে বিতরণ করা হয়:
শিলং উইকলি এক্সপ্রেস: সাপ্তাহিক নিউজলেটার যা ২০১০সালে শুরু হয়েছিল।
পূর্বে, বিদেশী পর্যটকদের মেঘালয় রাজ্য প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন ছিল।১৯৫৫সালে নিষেধাজ্ঞাগুলি সরানো হয়েছিল। মেঘালয়কে তার উচ্চভূমি, কুয়াশা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য স্কটল্যান্ডের সাথে তুলনা করা হয়। মেঘালয়ে দেশের সবচেয়ে ঘন প্রাথমিক বন রয়েছে এবং তাই এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইকোট্যুরিজম সার্কিট গঠন করে। মেঘালয় উপক্রান্তীয় বন বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতকে সমর্থন করে। মেঘালয়ে 2টি জাতীয় উদ্যান এবং 3টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে।
মেঘালয় পর্বতারোহণ, রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং এবং হাইকিং, গুহা (স্পেলঙ্কিং) এবং জল খেলার আকারে অনেক অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের সুযোগও অফার করে। রাজ্যটি বেশ কয়েকটি ট্র্যাকিং রুট অফার করে, যার মধ্যে কয়েকটি বিরল প্রাণীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগও আছে। উমিয়াম হ্রদে একটি ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স রয়েছে যেখানে রোবোট, প্যাডেলবোট, পালতোলা নৌকা, ক্রুজ-বোট, ওয়াটার-স্কুটার এবং স্পিডবোটের মতো সুবিধা রয়েছে।
চেরাপুঞ্জি ভারতের উত্তর-পূর্বের একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি রাজধানী শিলংয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। একটি সুন্দর 50-কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা চেরাপুঞ্জিকে শিলংয়ের সাথে সংযুক্ত করেছে।
লিভিংরুট ব্রিজগুলিও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ডাবল-ডেকার রুট ব্রিজ, নোংরিয়াট গ্রামে পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ। অন্যান্য অনেক রুট ব্রিজ কাছাকাছি পাওয়া যাবে নংথিমাই,মিন্তেং,তিন্রং গ্রামে. রুট ব্রিজ সহ অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে রিওয়াই গ্রাম, মাওলিনংয়ের পর্যটন গ্রামের কাছে, পাইনুরস্লা, বিশেষ করে রাংথিল্লাইং এবং মাউকির্নট গ্রাম এবং পশ্চিম জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার ডাউকির আশেপাশের এলাকা।
মেঘালয়ের জনপ্রিয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে রয়েছে এলিফ্যান্ট ফলস, বিশপ ফলস, অয়েনিয়া ফলস, নোকালিখাই ফলস, সুইট ফলস, সাদতুম ফলস, লাংশিয়াং ফলস।পশ্চিম খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত নংখনুম দ্বীপটি মেঘালয়ের বৃহত্তম নদী দ্বীপ এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। এটি নংস্টোইন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। কিনশি নদীর ফানলিয়াং নদী এবং নামলিয়াং নদীতে বিভক্ত হয়ে দ্বীপটি তৈরি হয়েছে। বালুকাময় সৈকত সংলগ্ন ফানলিয়াং নদী একটি হ্রদ গঠন করে। তারপর নদীটি বরাবর চলে যায় এবং একটি গভীর ঘাটে পৌঁছানোর আগে প্রায় 60 মিটার উঁচু একটি জলপ্রপাত তৈরি করে যাকে সাদথুম ফলস বলা হয়।
এগুলো বনের ছোট বা বড় এলাকা বা প্রাকৃতিক গাছপালা যা সাধারণত দেবতা বা গাছের আত্মা বা কিছু ধর্মীয় প্রতীককে উৎসর্গ করা হয়। এই স্থানগুলি সমগ্র ভারতেই পাওয়া যায়, স্থানীয় সম্প্রদায়ের দ্বারা সুরক্ষিত, এবং কিছু ক্ষেত্রে, স্থানীয়রা পাতা বা ফল স্পর্শ করবে না বা অন্য উপায়ে বন, উদ্ভিদ বা প্রাণীর ক্ষতি করবে না। এই অভিভাবকত্ব একটি পবিত্র এলাকা তৈরি করে যেখানে প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণীর বিকাশ ঘটে। মাওফ্লাং পবিত্র বন, যা "ল লিংডোহ" নামেও পরিচিত, এটি মেঘালয়ের অন্যতম বিখ্যাত পবিত্র বন। এটি শিলং থেকে প্রায় 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মেঘালয়েও অনেক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট হ্রদ রয়েছে। গুয়াহাটি-শিলং সড়কের উমিয়াম হ্রদ (জনপ্রিয়ভাবে বারা পানি নামে পরিচিত যার অর্থ বড় জল) পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। মেঘালয়ে বেশ কিছু পার্ক আছে; থাংখারাং পার্ক, ইকো-পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং লেডি হায়দারি পার্ক কয়েকটি নাম। শিলং থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডাউকি বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার এবং মেঘালয় এবং বাংলাদেশের সীমান্তের কিছু উচ্চতম পর্বতশ্রেণীর একটি মনোরম দৃশ্য প্রদান করে।থাডলাস্কিন লেক (পুং সাজর নাংলি)মেঘালয়ের একমাত্র ঐতিহাসিক হ্রদ। এটি পশ্চিম জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলা জোওয়াইয়ের অধীনে পড়ে মুখলা গ্রাম নামে একটি ছোট গ্রামের পাশে জাতীয় সড়ক 6 এর পাশে অবস্থিত। এটি শিলং শহর থেকে প্রায় ৩৫ মাইল দূরে.বালপাক্রম ন্যাশনাল পার্ক, গারো পাহাড়ে অবস্থিত নকরেক ন্যাশনাল পার্ক অন্যতম প্রধান আকর্ষন।
মেঘালয়ে আনুমানিক ৫০০টি প্রাকৃতিক চুনাপাথর এবং বেলেপাথর গুহা রয়েছে যা উপমহাদেশের দীর্ঘতম এবং গভীরতম। ক্রেম লিয়াত প্রাহ হল দীর্ঘতম গুহা, আর সিনরাং পামিয়াং হল গভীরতম গুহা। দুটিই জৈন্তিয়া পাহাড়ে অবস্থিত। ইউনাইটেড কিংডম, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুহারা এই গুহাগুলি অন্বেষণ করতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মেঘালয় সফর করছে।
মেঘালয় তার লিভিং রুট ব্রিজগুলির জন্য বিখ্যাত, নদীর উপর তৈরি এক ধরনের ঝুলন্ত সেতু যা নদীর বিপরীত তীরে বা পাহাড়ের ঢালে লাগানো ফিকাস ইলাস্টিকা গাছের পরস্পর সংযুক্ত শিকড় ব্যবহার করে তৈরি। এই সেতুগুলি চেরাপুঞ্জি, নংতালাং, কুদেং রিম এবং কুদেং থিম্মাই গ্রামের (যুদ্ধ জয়ন্তিয়া) চারপাশে দেখা যায়। নোংরিয়াট গ্রামে একটি ডাবল ডেকার ব্রিজ রয়েছে।
মেঘালয়ের পর্যটন আগ্রহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে:
জাকরেম: শিলং থেকে ৬৪ কিমি দূরে, একটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য অবলম্বন যেখানে সালফার জলের উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে, যা নিরাময়কারী ঔষধি গুণাবলী রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
রানিকোর: শিলং থেকে ১৪০কিমি দূরে, মেঘালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পটগুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রচুর কার্প এবং অন্যান্য মিঠা পানির মাছ রয়েছে।
ডাউকি: শিলং থেকে ৯৬কিলোমিটার, একটি সীমান্ত শহর, যেখানে একজন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের এক ঝলক দেখতে পারেন। উমঙ্গট নদীতে বসন্তের সময় রঙিন বার্ষিক নৌকাবাইচ একটি অন্যতম আকর্ষণ।
শাদডেইনথলেনফলস: সোহরার কাছে অবস্থিত।সেই জলপ্রপাত যেখানে খাসি কিংবদন্তির পৌরাণিক দানবকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল, থলেনকে যেখানে কসাই করা হয়েছিল সেই পাথরগুলিতে তৈরি কুঠার-চিহ্নগুলি এখনও অক্ষত এবং দৃশ্যমান।
ডিয়েনজিইপিক: শিলং মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত, শিলং শিখর থেকে মাত্র ২০০ ফুট নিচে।এর শীর্ষে একটি বিশাল ফাঁপা রয়েছে,কাপের মতো আকৃতির, এটি একটি বিলুপ্ত প্রাক-ঐতিহাসিক আগ্নেয়গিরির গর্ত বলে বিশ্বাস করা হয়।
দ্বার্কসুইড: উমরোই-ভোইলিম্বং রোডের পাশে একটি স্রোতে অবস্থিত প্রশস্ত, পাথুরে বালির তীর সহ একটি সুন্দর পুল যা দ্বারকসুইড বা শয়তানের দরজা হিসাবে পরিচিত।
কিলাংরক: মাইরাং থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, লাল গ্রানাইটের একটি কয়েক মিলিয়ন বছর পুরানো খাড়া গম্বুজ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৪০০ফুট উচ্চতায় উঠছে।
বাংলাদেশ হতে দেখা ডাউকি শহরপবিত্র বন মাওফ্লাং: রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত পবিত্র-উদ্যান গুলোর একটী।শিলং থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। অনাদিকাল থেকে সংরক্ষিত, এই পবিত্র বনে উদ্ভিদের বিস্তৃত পরিসর রয়েছে, বহু শতাব্দী ধরে জমে থাকা মাটিতে হিউমাসের ঘন কুশন এবং অ্যারোয়েড, পাইপার, ফার্ন, ফার্ন-অ্যালি এবং অর্কিডের এপিফাইটিক বৃদ্ধিতে ভারী গাছ রয়েছে।
রাজ্যের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে নানা সহিংসতার ঘটনা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ঐতিহ্যবাহী কাট-এন্ড-বার্ন শিফট চাষ পদ্ধতি থেকে বন উজাড়। মেঘালয়ে খাসি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশি মুসলমানদের মধ্যে বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছে।
বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতীয় রাজ্যগুলিতে অবৈধ অভিবাসন একটি প্রধান সমস্যা। পশ্চিমে আছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে মেঘালয় এবং আসাম এবং পূর্বে ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মণিপুর। এই স্থানান্তর বন্ধ করা হোক বা নিয়ন্ত্রণযোগ্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা হোক। মেঘালয় এবং বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার মধ্যে প্রায় ৩৫০টি বেড়াযুক্ত; কিন্তু সীমান্তে ক্রমাগত টহল দেওয়া হয় না এবং ছিদ্রযুক্ত। এটিকে সম্পূর্ণভাবে বেড় করার এবং আইডি কার্ড ইস্যু করার উপায় চালু করার প্রচেষ্টা চলমান।মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, আগস্ট ২০১২সালে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে দেশটির উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশীদের অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার জন্য সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
২০০৬এবং ২০১৩এর মধ্যে, মেঘালয়ে প্রতি বছর ০থেকে ২৮ জন বেসামরিক লোক মারা গেছে (বা প্রতি ১০০,০০০ জনে প্রায় ০ থেকে ১জন), যাকে রাজ্য কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাস-সম্পর্কিত ইচ্ছাকৃত সহিংসতা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। ইচ্ছাকৃত সহিংসতা থেকে বিশ্বের গড় বার্ষিক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০জনে ৭.৯ হয়েছে। এগুলো মূলত বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে এবং বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের ফল। রাজনৈতিক রেজোলিউশন এবং সংলাপের পাশাপাশি, বিভিন্ন খ্রিস্টান সংগঠন সহিংসতা প্রতিরোধ এবং গ্রুপের মধ্যে আলোচনার প্রক্রিয়াকে সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজ্যটিতে ২৩টি রাজ্য সরকার রয়েছে, যার গড় আয়ু ১৮মাসেরও কম। তিন বছরের বেশি সময় টিকে আছে মাত্র তিনটি সরকার। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অতীতে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ছে।
ঝুম চাষ, বা কাট-এন্ড-বার্ন শিফট চাষ, মেঘালয়ের একটি প্রাচীন রীতি।[১২] এটি লোককাহিনীর মাধ্যমে সাংস্কৃতিকভাবে জড়িত। একটি কিংবদন্তীতে বলা হয়েছে যে বাতাসের দেবতা শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ের দেবতার সাথে আকাশের গাছ থেকে বীজ ঝেড়ে ফেলেছিলেন, যা ডো'আমিক নামে পরিচিত একটি পাখি দ্বারা তুলে নিয়ে বপন করা হয়েছিল। এগুলো ছিল ধানের বীজ। ভগবান মানুষকে সেই স্বর্গীয় বীজগুলির মধ্যে কিছু দিয়েছিলেন, শিফট কৃষি এবং সঠিক ধান চাষের অনুশীলনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, এই দাবির সাথে যে প্রতিটি ফসলের প্রথম ফসলের একটি অংশ অবশ্যই তাকে উৎসর্গ করতে হবে। আরেকটি লোককথা মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের যেখানে হাড়-নেরিপা-জেন-নিতেপা নামে একজন ব্যক্তি মিসি-কোকডোক নামের পাথরের কাছে একটি জমি থেকে ধান এবং বাজরা সংগ্রহ করেছিলেন এবং চাষ করেছিলেন। তারপর তিনি অন্যদের সাথে এই জ্ঞান ভাগ করে নেন, এবং বছরের বিভিন্ন মাসের নামকরণ করেন, যার প্রতিটি হল চাষাবাদের একটি পর্যায়।[১৩]
আধুনিক সময়ে, শিফট চাষ মেঘালয়ের জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি।[১৪] একটি ২০০১ স্যাটেলাইট ইমেজিং সমীক্ষা দেখিয়েছে যে শিফট চাষের ফলে প্রাথমিক ঘন বনের প্যাচগুলি এমনকি জীবমণ্ডল হিসাবে সুরক্ষিত এলাকা থেকেও হারিয়ে গেছে।[১৫] ঝুম চাষ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের জন্যই হুমকি নয়, এটি কৃষির একটি কম ফলন অনুৎপাদনশীল পদ্ধতিও। মেঘালয়ের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্য কারণ এর অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে।[১৬][১৭] তবে শিফ্ট ফার্মিং এমন একটি অনুশীলন যা উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য যেমন মেঘালয়ের জন্য অনন্য নয়, সমস্যাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে পাওয়া যায়।[১৮]
↑Arnold P. Kaminsky and Roger D. Long (2011), India Today: An Encyclopedia of Life in the Republic, আইএসবিএন৯৭৮-০৩১৩৩৭৪৬২৩, pp. 455–459
↑"Fact sheet on meghalaya"(পিডিএফ)। ১০ মার্চ ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
↑ORGI। "C-16: Population by Mother Tongue"। www.censusindia.gov.in। Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-১০।
↑SANKAR KUMAR ROY, Aspects of Neolithic Agriculture and Shifting Cultivation, Garo Hills, Meghalaya, Asian Perspectives, XXIV (2), 1981, pp 193-221
↑Mazumdar, Culture Change in Two Garo Villages, Calcutta: Anthropological Survey of India (1978)
↑Ramakrishnan, P. S. (1992), Shifting agriculture and sustainable development: an interdisciplinary study from north-eastern India, Parthenon Publishing Group, আইএসবিএন১-৮৫০৭০-৩৮৩-৩
↑Roy, P. S., & Tomar, S. (2001), Landscape cover dynamics pattern in Meghalaya, International Journal of Remote Sensing, 22(18), pp 3813-3825
↑Saha, R., Mishra, V. K., & Khan, S. K. (2011), Soil erodibility characteristics under modified land-use systems as against shifting cultivation in hilly ecosystems of Meghalaya India, Journal of Sustainable Forestry, 30(4), 301-312
↑Pakrasi, K., Arya, V. S., & Sudhakar, S. (2014), Biodiversity hot-spot modeling and temporal analysis of Meghalaya using Remote sensing technique, International Journal of Environmental Sciences, Vol 4, Number 5, pp 772-785
↑Spencer, J. E. (1966), Shifting cultivation in southeastern Asia (Vol. 19), University of California Press, আইএসবিএন৯৭৮-০৫২০০৩৫১৭১