বিষয়বস্তুতে চলুন

ক্রিয়জ পদার্থ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্রিয়জ পদার্থের ঘনমাত্রার সাথে একটি অনুমিত গ্রাহকের সক্রিয়তার লেখচিত্র
গ্রাহক সংলগ্নক বা গ্রাহক লিগ্যাণ্ডের ফলপ্রসূতার ক্রম।

ঔষধসঞ্চরণবিজ্ঞানের আলোচনায় ক্রিয়জ পদার্থ বা গ্রাহক উদ্দীপক পদার্থ (ইংরেজি পরিভাষায় অ্যাগোনিস্ট Agonist) বলতে এমন কোনও ঔষধ (যেক্ষেত্রে ক্রিয়জ ঔষধ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়) বা সংলগ্নক (লিগ্যান্ড) জাতীয় রাসায়নিক পদার্থকে বোঝায়, যার অণুটি দেহকোষের কোনও সুনির্দিষ্ট গ্রাহক প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয়ে একটি সংলগ্নক-গ্রাহক সমবায় (ligand-receptor complex) সৃষ্টি ক'রে গ্রাহকটিকে উদ্দীপ্ত বা সক্রিয় করে এবং এভাবে কোষের ভেতরে একটি নিম্নমুখী ইতিবাচক জৈব প্রতিক্রিয়ার সূত্রপাত করে।[] ক্রিয়জ পদার্থগুলি সাধারণত দেহের অভ্যন্তরে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন ক্রিয়জ বা সংলগ্নক অণুসমূহের ক্রিয়াকে (যেমন স্নায়ুসঙ্কেত প্রেরক তথা নিউরোট্রান্সমিটার, উদ্বোধক গ্রন্থিরস তথা হরমোন, ইত্যাদি স্বাভাবিক সংলগ্নকের ক্রিয়া) অনুকরণ করতে পারে এবং সম্পূর্ণ একই রকম (পূর্ণ ক্রিয়জ পদার্থ) বা কাছাকাছি (আংশিক ক্রিয়জ পদার্থ) কিছু ধারাবাহিক কোষীয় ঘটনার সূত্রপাত করতে পারে (যেমন কোষীয় সংকেতপ্রেরণ বা প্রাণরাসায়নিক প্রপাত)। ক্রিয়জ পদার্থগুলি ঔষধ নির্মাণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপকরণ, কেননা দেহের সুনির্দিষ্ট গ্রাহক প্রোটিনের প্রতি লক্ষ্যস্থির করে এগুলি নকশা করা যায় ও এভাবে শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলিকে উপযোজন (Modulate) করা যায়। ব্যথা নিবৃত্তি থেকে শুরু করে উদ্বোধক গ্রন্থিরস বা হরমোন প্রতিস্থাপন হয়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত ক্রিয়জ ঔষধগুলির আরোগ্যমূলক প্রয়োগ বিদ্যমান। ক্রিয়জ ঔষধগুলির প্রভাব প্রায়শই এগুলির ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে এবং একটি প্রয়োগমাত্রা-প্রতিক্রিয়া বক্ররেখা অনুসরণ করে। সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের দিকে লক্ষ্যস্থির করা হয় বলে অযাচিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ন্যূনতম করা সম্ভব হয়। ক্রিয়জ ঔষধ বা পদার্থগুলির সাথে গ্রাহক প্রোটিনের আন্তঃক্রিয়া অধ্যয়ন ঔষধের ক্রিয়াপদ্ধতি অনুধাবন, চিকিৎসা কাম্যতমকরণ ও ঔষধবৈজ্ঞানিক গবেষণার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ক্রিয়জ পদার্থের বিপরীত দুইটি ধারণা আছে। একটি অক্রিয়জ বা গ্রাহক অবদমক পদার্থ (Antagonist) কোনও গ্রাহক উদ্দীপক পদার্থের ক্রিয়া প্রতিরোধ করে। আরে একটি বিপরীত ক্রিয়জ পদার্থ (Inverse agonist) কোনও ক্রিয়জ পদার্থ ক্রিয়ার বিপরীত একটি ক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে এগুলিকে (পূর্ণ বা আংশিক ক্রিয়জ, অক্রিয়জ ও বিপরীত ক্রিয়জ পদার্থ) একত্রে গ্রাহক উপযোজক (Receptor modulator) বা গ্রাহক সংলগ্নক (Receptor ligand) শ্রেণীর পদার্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. এ. এফ. এম. সাইফুল ইসলাম (১৯৯৭), মৌলিক ওষুধবিজ্ঞান, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ১২০